পশ্চিমবঙ্গের সকলের জন্য সুখবর। পশ্চিমবঙ্গের কর্মহারা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকার এক ঐতিহাসিক প্রকল্প চালু করেছে – শ্রমশ্রী প্রকল্প (Shramashree Scheme)। বহু শ্রমিক বাইরের রাজ্যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু নানা কারণে চাকরি হারিয়ে তাঁদের অনেককেই ফিরে আসতে হয়েছে নিজের রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই নবান্ন ঘোষণা করেছে প্রতিমাসে ₹৫,০০০ আর্থিক সহায়তা। এবার শুরু হয়েছে আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া। তবে শুধু আবেদন করলেই টাকা মিলবে না। প্রকল্পে যোগ্য হতে হলে কিছু কড়া নিয়ম মেনে চলতে হবে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য: কর্মহীন শ্রমিকদের পাশে সরকার
শ্রমশ্রী প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল—
- বাইরের রাজ্যে কর্মরত থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া। সকলের জন্য নয়।
- নতুন কাজ খোঁজার আগে অন্তত ন্যূনতম ভাতা পৌঁছে দেওয়া।
- শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ (Training) দেওয়া।
- তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
সরকারের দাবি, এই প্রকল্প শুধুমাত্র টাকার সাহায্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথও খুলে দেবে।
মাসে কত টাকা মিলবে?
যোগ্য আবেদনকারীরা শ্রমশ্রী প্রকল্পের আওতায় প্রতিমাসে ₹৫,০০০ করে বারো মাসে ₹৬০,০০০ পর্যন্ত পাবেন। টাকা যাবে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে (Direct Benefit Transfer)।
এছাড়া আরো বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে, যেমন – সন্তানদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সুবিধা। সরকারি স্কলারশিপে অগ্রাধিকার। স্বাস্থ্য ও বীমা প্রকল্পে সংযুক্তিকরণ। ভবিষ্যতে দক্ষতা বৃদ্ধির ট্রেনিং ও কর্মসংস্থানের সুযোগ।
কাদের জন্য এই প্রকল্প?
শ্রমশ্রী প্রকল্প বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে—
- যারা বাইরের রাজ্যে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন এবং কাজ হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন।
- যাঁদের পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস ছিল অন্য রাজ্যের কাজ।
- যাঁদের এখনও স্থায়ী কাজ হয়নি।
অযোগ্য বা ভুয়ো আবেদনকারীরা যাতে এই প্রকল্পের সুযোগ না নিতে পারে, তার জন্যই নবান্ন একাধিক কড়া নিয়ম জারি করেছে।
শ্রমশ্রী প্রকল্পে আবেদন প্রক্রিয়া
- প্রথমে আবেদনকারীদের থাকতে হবে কর্মসাথী পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন।
- এরপর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
- আবেদন করার পর জেলা প্রশাসন ও শ্রম দপ্তর প্রতিটি কেস যাচাই করবে।
- যাচাই শেষ হলে যোগ্য আবেদনকারীর নাম তালিকাভুক্ত হবে।
প্রথম ধাপেই কয়েক লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছে।
নবান্নের নতুন নিয়ম: টাকা পেতে হলে কী মানতে হবে?
সরকার জানিয়েছে, প্রকৃত পরিযায়ী শ্রমিকরাই যাতে এই সুবিধা পান, তার জন্য এবার থেকে ব্যাংক একাউন্ট ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- আবেদনকারীর নাম, ব্যাংক একাউন্টের নাম ও অভিভাবকের নাম (পিতা/স্বামী) অবশ্যই মিলতে হবে।
- একাউন্ট যদি চালু না থাকে, তবে আবেদন বাতিল হবে।
- ভুয়ো তথ্য দিলে আবেদনও বাতিল হবে এবং ভবিষ্যতে সরকারি প্রকল্প থেকেও বাদ পড়তে হবে।
আগে যেকোনও ব্যাংক একাউন্ট দিলেই টাকা চলে যেত। কিন্তু শ্রমশ্রী প্রকল্পে এবার থেকে প্রতিটি তথ্য খুঁটিয়ে দেখা হবে।
কেন কড়া নিয়ম আনা হলো?
অতীতে একাধিক প্রকল্পে দেখা গিয়েছে ভুয়ো আবেদন ও আর্থিক অনিয়ম। অনেক অযোগ্য মানুষ প্রকল্পের টাকা পেয়ে গিয়েছেন। এবার সেই সম্ভাবনা রুখতেই কঠোর নিয়ম চালু করা হয়েছে।
সরকারের মতে, শ্রমশ্রী প্রকল্পে শুধুমাত্র প্রকৃত শ্রমিকদেরই আর্থিক সহায়তা পৌঁছানো হবে। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতি কমবে, অন্যদিকে সত্যিকারের বিপন্ন শ্রমিকরা স্বস্তি পাবেন।
শ্রমশ্রী প্রকল্পের গুরুত্ব
- অর্থনৈতিক সহায়তা: শ্রমিক পরিবারগুলো আর্থিক সঙ্কটে না পড়েই অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ চালাতে পারবে।
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা: শিশুদের পড়াশোনা ও পরিবারের স্বাস্থ্য পরিষেবা সুরক্ষিত থাকবে।
- কর্মসংস্থানের সুযোগ: প্রশিক্ষণ ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে নতুন কাজ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
- ভুয়ো আবেদন রোধ: প্রকৃত উপকারভোগীদের সুরক্ষা দেবে কড়া নিয়ম।
শ্রমশ্রী প্রকল্প নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বড় সহায়তা। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু আবেদন করলেই হবে না। প্রতিটি তথ্য সঠিক হতে হবে এবং সরকার নির্ধারিত নিয়মগুলো মানতে হবে। এতে প্রকৃত শ্রমিকরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি আর্থিক দুর্নীতি ও জালিয়াতিও রোধ হবে।
